Google AdSense গুগল এডসেন্স হলো ইন্টারনেট ভিত্তিক একটি বিজ্ঞাপনী সংস্থা যা পরিচালনা করছে গুগল নিজে। ব্লগ, ইউ টিউব এবং ওয়েবসাইটে যে বিজ্ঞাপন গুলো আমরা দেখতে পায় তা কোনোটিই ফ্রি তে নয়। গুগল ওই বিজ্ঞাপন গুলো প্রচার করে থাকে এবং বিনিময়ে ওই সাইট বা ইউ টিউব চ্যানেল মালিক কে পেমেন্ট করে থাকে। যে কেও তাদের পন্যের বিজ্ঞাপন এখানে টাকার বিনিমিয়ে দেখাতে পারেন।
আজ পর্যন্ত ৫২ টি ভাষার সাইট এ গুগল এ্যাডসেন্স এর অ্যাড প্রচারিত হয়ে থাকে। গুগল এ্যাডসেন্স ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭ তারিখ হতে বাংলা ভাষাকে সাপোর্ট করা শুরু করেছে।
যে সকল কারণে Google Adsense পেমেন্ট করে :
ওয়েবসাইটের মালিকরা তাদের প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনগুলির জন্য বিভিন্ন খাত থেকে অর্থ পেয়ে থাকে:
- সিপিসি (প্রতি ক্লিকের জন্য আয়)
- সিপিএম (প্রতি হাজার ইমপ্রেশনের জন্য আয়)
- অ্যাক্টিভ ভিউ সিপিএম (প্রতি হাজার ইমপ্রেশনে সক্রিয় দর্শনের জন্য আয়)
- সিপিই (সময় অতিবাহিত করলে যে আয়)
সিপিসি
আপনার ওয়েবসাইটটিতে প্রদর্শিত কোনও বিজ্ঞাপনে কোনও ওয়েবসাইট দর্শক ক্লিক করলে আপনাকে গুগল পেমেন্ট করবে। বিজ্ঞাপনের বিষয়বস্তুর উপর নির্ভর করে পেমেন্ট কম বেশি হতে পারে।
সিপিএম
প্রতি ১০০০ টি ইমপ্রেশনে পেমেন্ট। এই ক্ষেত্রে, দর্শক যদি আপনার সাইট বা চ্যানেল ভ্রমণ করে অথবা গুগল এর প্রচারিত এডগুলো দেখে তবে একটি পেমেন্ট দেওয়া হয়ে থাকে সেক্ষেত্রে অ্যাড এ ক্লিক করার বিষয়টি আসবে না।
তবে এর পেমেন্টটি একটু কম হয়ে থাকে।
অ্যাক্টিভ ভিউ সিপিএম
অ্যাক্টিভ ভিউ সিপিএম জন্য ইমপ্রেশনগুলি অবশ্যই “দর্শনযোগ্য” হিসাবে দেখতে হবে অর্থাৎ কমপক্ষে এক সেকেন্ডের জন্য বিজ্ঞাপনের কমপক্ষে ৫০ ভাগ দেখতে হবে।
এটি সিপিএম থেকে পেমেন্ট কিছুটা বেশি।
সিপিই
এখানে একজন ব্যবহারকারী ওই প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনে কতটা সক্রিয় তার উপর পেমেন্ট নির্ভর করে।
সাধারণ শর্তগুলোর মধ্যে
- সাইট মালিকের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর হতে হবে।
- একটি সক্রিয় Gmail অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে যা আগে কোনও অ্যাডসেন্স অ্যাকাউন্টের সাথে লিঙ্ক নয়
- একটি ওয়েবসাইট থাকা দরকার এবং সেটি গুগলের সমস্ত শর্তাদি পূরণ করবে
- ওয়েবসাইটটির বয়স কমপক্ষে ৩ মাস হলে ভালো। তবে যদি খুব ভালো কোয়ালিটি হয় তবে অনেক কম সময়েও অনুমোদন পেতে পারে
- কমপক্ষে ৩৫ টি নিবন্ধ প্রকাশিত হওয়া উচিত
- Google Search Console এ সাইটের Sitemap সঠিক ভাবে সাবমিট করতে হবে। এডসেন্সের আবেদনের পূর্বে নিশ্চিত হতে হবে যে, আপনার সাইটটির প্রতিটি আর্টিকেল গুগল ঠিক মতো ক্রল করছে কি না
- ভিজিটর কোনো বিষয় না। তবে বেশি হলে ভালো
গুগল এডসেন্স থেকে কিভাবে টাকা ইনকাম করা যায় ( Google AdSense make money) :
গুগল এডসেন্স থেকে কিন্তু আপনি প্রতিমাসে প্রচুর টাকা ইনকাম করতে পারবেন। আপনার যদি একটি ওয়েবসাইট থেকে থাকে বা ইউটিউব চ্যানেল থেকে থাকে অথবা আপনি যদি অ্যাপস তৈরি করেন তাহলে কিন্তু সেখানে অ্যাড দেখিয়ে গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে টাকা ইনকাম করতে পারবেন। ইউটিউবে বা ওয়েব সাইটে অ্যাড দেখানোর জন্য আপনাকে আগে সেটিকে মনিটাইজ করতে হবে। ইউটিউবে বা ওয়েবসাইটে মনিটাইজ করার জন্য আপনাকে কিছু রুলস মেনে চলতে হবে সেই রুলস গুলো যদি আপনি ফলো করেন তাহলে কিন্তু আপনার ইউটিউব চ্যানেলটি বা ওয়েবসাইটটি মনিটাইজ করে টাকা ইনকাম করতে পারবেন গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে। ওখানে অ্যাড শো করলে কেউ এড এ ক্লিক করলে কিন্তু আপনার গুগোল এডসেন্সে টাকা জমা হতে থাকবে।
অ্যাডসেন্স পাওয়ার সহজ উপায় :
- ইউটিউবে বা ওয়েবসাইটে অ্যাডসেন্স পাওয়ার জন্য আপনাকে কিছু রুলস ফলো করতে হবে যেমন
- কোন কপি ভিডিও কিন্তু ইউটিউবে আপলোড করা যাবেনা বা ওয়েবসাইটে পোস্ট করা যাবে না
- কোনরকম এডাল্ট কনটেন্ট কিন্তু সেখানে পোস্ট করা যাবেনা
- ইউটিউব এ ক্ষেত্রে আপনাকে এক বছরে 4000 ঘন্টা ওয়াচ টাইম এবং 1000 সাবস্ক্রাইব কমপ্লিট করতে হবে তাহলে কিন্তু আপনি মনিটাইজ এর জন্য আপিল করে গুগল এডসেন্সের মাধ্যমে এড দেখে টাকা ইনকাম করতে পারবেন।
- ওয়েবসাইটে ক্ষেত্রে আপনারা অবশ্যই About us, Contact Us , Privacy policy পেজ তৈরি করতে হবে , এবং অন্তত ২০ টি ইউনিক পোস্ট করতে হবে এবং ওয়েবসাইটের বয়স অন্তত এক মাস হাওয়া লাগবে তাহলে কিন্তু খুব সহজে আপনি এডসেন্স অ্যাপ্রুভ পেয়ে যাবেন
এডসেন্স সম্পর্কে টুকিটাকি :
- ৫২ টি ভাষায় পৃথিবীর যেকোনো দেশ থেকে এ্যাডসেন্স অনুমোদনের জন্য আবেদন করা যায় তবে ইংরেজী ওয়েবসাইটের মাধ্যমে বেশী আয় হয়ে থাকে
- একটি ওয়েবসাইট কে এ্যাডসেন্সের জন্য তৈরি করতে প্রায় ৬ মাসের বেশি সময় লাগে। অভিজ্ঞজনদের মতে সাইটটির যথাযথ SEO সহ সকল খুটিনাটি সমস্যা সমাধান করে তবেই এ্যাডসেন্সের জন্য আবেদন করা উচিৎ। তা না হলে আবেদন করতে নিষেধ করা হয়, কারণ তাতে হিতে বিপরীত হতে পারে
- আর্টিকেল যত বড় হয় ততই ভালো কারণ তাতে ভিজিটর অনেক বেশি তথ্য পেয়ে থাকে, সে ক্ষেত্রে ১৫০০-২০০০ ওয়ার্ড রাখাটা ভাল। তবে ৪০০-৫০০ ওয়ার্ড রাখলেও চলে
- ব্লগস্পট, কপি করা আর্টিকেল ও অন্য ওয়েবসাইটের ছবি ব্যবহার করে এ্যাডসেন্স অনুমোদন পাওয়া যায় না, অর্থাৎ সাইটে কপিরাইট মুক্ত ছবি ব্যবহার করুন । ব্লগস্পট দিয়ে অনেক আগে করা যেত, কিন্তু এখন হয় না
- দ্রুপাল, জুমলা, ব্লগার, ওয়ার্ডপ্রেস বা অন্য যে কোনো CMS ব্যবহার করে গুগল এডসেন্স এর জন্য ওয়েবসাইট তৈরি করা যায়
- একটি ভালমানের কাষ্টম থিমস এবং ডট কম ডোমেন নিয়ে কাজ করাটা আপনার ভবিষ্যতের জন্য ভালো
- যে কোনো বিষয় নিয়ে লেখালেখিই এ্যাডসেন্স অনুমোদন দেয় তবে আইটি, ওয়েব ডিজাইন ও এসইও নিয়ে লিখতে পারলে দ্রুত এ্যাডসেন্স পাওয়ার নজির আছে আর নিউজ ও ভিডিও নিয়ে যে সাইট গুলো কাজ করে তারা খুবই কম সময় অনুমোদন পায়। তবে মনে রাখবেন সঠিকভাবে এসইও করা সাইট কে এ্যাডসেন্স খুব বেশি গুরুত্ব দেয়
- আপনার সাইটটিতে About Us, Contact, Privacy Policy এবং Terms and Condition অবশ্যই রাখবেন। এইগুলা খুবই সহজে বিভিন্ন সাইট থেকে ফ্রীতে পাওয়া যায়, শুধু একটু পরিবর্তন করে নিলেই হয়
- কোনো খারাপ লিংক যেন না থাকে অর্থাৎ কোনো পর্ন সাইট এর সাথে যেন কোনো লিংক না থাকে
- এসকল বিষয় ছাড়াও খারাপ প্লাগিন আপনাকে অনেক বছর পিছিয়ে দিতে পারে।
গুগল এ্যাডসেন্সের আবেদন করার আগে আপনাকে অবশ্যই যে বিষয় গুলো নিয়ে আবারো একবার কাজ করা উচিৎ
- সাইট এর সকল আর্টিকেল এর মধ্যে ৯০-৯৫ ভাগ ইউনিক কি না তা পরীক্ষা করা
- সাইট এর সকল গুরুত্বপূর্ণ পেজ ঠিকভাবে আছে কি না
- ৩০-৩৫ টি আর্টিকেল আছে কি না
- প্রতিটি আর্টিকেল গুগল দ্বারা ঠিকমতো ইনডেক্স হচ্ছে কি না
- SSL সার্টিফিকেট আছে কি না
- সাইটটি কি সঠিক ভাবে এসইও করা হলো কিনা
- মোবাইল ফ্রেন্ডলি অবস্থায় আছে কি না
- পরিছন্ন চেহারার ওয়েবসাইট সব সময় গুগল এর কাছে পছন্দনিও
- Organic Keyword দিয়ে যদি কিছু আর্টিকেল গুগল এ Rank করানো যায় তবে তা ওই সাইট এর জন্য এ্যাডসেন্স অনুমোদন পাওয়া অনেক সহজ করে তোলে
অনেক সময় ওয়েবসাইটগুলি অ্যাডসেন্স দিয়ে আয় কমে যায় কেন ?
বিশ্বের হাজার হাজার মানুষ গুগল অ্যাডসেন্স দিয়ে কেন খুব বেশি অর্থোপার্জন করতে পারছে না তা জিজ্ঞাসা করে।
আপনিও প্রচুর অর্থোপার্জন করতে পারছেন না, কিন্তু কেন? আলাদাভাবে কী করা দরকার? আপনার সাইটটি অ্যাডসেন্সের সাহায্যে প্রচুর অর্থোপার্জন না করার কারণ গুলো হলো :
আপনার সাইটটি তে কাছে পর্যাপ্ত ট্র্যাফিক নেই:
ট্র্যাফিক হ’ল যে কোনও সফল অ্যাডসেন্স ওয়েবসাইটের জীবন। ট্র্যাফিক নেই মানে উপার্জনও নেই।
আপনার ওয়েবসাইটটি ট্র্যাফিক পাচ্ছে না তার প্রচুর কারণ রয়েছে, যেমন:
- আপনি একটি খারাপ কীওয়ার্ড বা নিম্ন-ভলিউম নিস পছন্দ করেছেন।
- আপনার সামাজিক মিডিয়ায় মার্কেটিং ঠিক মতো হচ্ছে না।
- আপনার ওয়েবসাইটটিতে মানসম্মত লেখা নাই।
- আপনি একটি ধীর ওয়েব হোস্ট বেঁছে নিয়েছেন অথবা আপনার সাইটটি অন্য কোনো কারনে অনেক ধীর হয়ে গেছে।
আপনার দুর্বল ট্র্যাফিকের কারণ যেইটাই হোক না কেন আপনার যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সেই সমস্যাটির সমাধান করা উচিত। যত দ্রুত আপনি বেশি ট্র্যাফিক আকর্ষণ করবেন তত তাড়াতাড়ি আপনি প্রচুর অ্যাডসেন্স অর্থোপার্জন করতে পারেন।
গুগল এডসেন্স এর পেমেন্ট যেভাবে আনবেন
বর্তমানে অনলাইন এর ইনকাম হাতে পাওয়া বেশ সোজা ডাচ বাংলা ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাঙ্ক, ব্যাঙ্ক এশিয়া থেকে EFT এর মাধ্যমে ৪-৫ দিনেই টাকা উত্তোলন করা যায়। এই টাকা সরাসরি ব্যাংকেই চলে আসে। আপনি এটিএম কার্ড অথবা চেক দিয়ে উঠাতে পারবেন। এমনকি DBBL Mobile Banking এর মাধমেও টাকা উঠানো যায়।
নিজের বিজ্ঞাপনগুলিতে কখনও ক্লিক করবেন না
আপনার নিজের ওয়েবসাইটে কোনও বিজ্ঞাপনে ক্লিক করা প্রতারণামূলক বলে বিবেচিত হয় এবং সে ক্ষেত্র্রে গুগল আপনার একাউন্টটি বন্ধ করে দিতে পারে।