ওয়েবসাইট কি আসলেই ফেসবুকের বিকল্প? ফেসবুকের বিকল্প হিসেবে কি করা যেতে পারে!
কিছুদিন আগে সংগত কারনে ফেসবুক ডাউন করে দেয়া হয়েছিল, এতে ভোগান্তির স্বীকার হয়েছিল এফ কমার্স মার্কেটিং এর সাথে জড়িত সবাই। তার পরও বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একমাত্র বিজনেস মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম ফেসবুক। এর পিছনে অনেক গুলো কারন আছে।
- বাংলাদেশের প্রচুর পরিমান ফেসবুক ইউজার।
- বাংলাদেশের অনেকেই নেট বলতে ফেসবুক কেই বুঝে।
- উঠতি জেনারেশন বা কাস্টমার অডিয়েন্স সবাই কম বেশি ফেসবুক ব্যবহার করে থাকে।
- ফেসবুকের ব্যবহারের কারন অনেক বেশি, মুলত শুধু সোশ্যাল মিডিয়া হিসেবে নয়, অনেকের কাজের জায়গা এখন ফেসবুক, যেমন যারা এফ কমার্সের সাথে জড়িত তারা মুলত ফেসবুকে চ্যাটিং করতে আসে না, তারা আসে তাদের পন্যের প্রচার করতে এবং ব্যবসার কার্যক্রম পরিচালনা করতে।
- আলাদা ভাবে সোশ্যাল মিডিয়ার ডাটা কিনতে পাওয়া যায়, যা শহরের বাইরে কম দামে ফেসবুকে আসার একটা মাধ্যম।
- যোগাযোগের একটা মাধ্যম হচ্ছে ফেসবুক, ভয়েস কল থেকে শুরু করে পড়াশুনার কার্যক্রম সব এখন ফেসবুক গ্রুপ।
- এত এক্টিভিটি মুলত অন্যান্য কোন প্ল্যাটফর্মে নেই, তাই একমাত্র ফেসবুকের মাধ্যমেই বাংলাদেশের প্রায় ৮৮% ভাগ উদ্যক্তা ফেসবুক মুখি।
এছাড়া আরো কিছু কারন আছে,
- ফেসবুক পেজ খুলতে কোন অর্থ খরচ হয় না।
- সহজেই পেজ মেনেজ করা যায়।
- সহযোগিতা করার মত অনেকেই আছেন।
- ব্যবসার শুরু করতে মোটামুটি তুলনামুলক খরচ কম হয়, যেহেতু পেইড মার্কেটিং ছাড়া এখানে খরচ বলতে গ্রাফিক্স, পেজ অপ্টিমাইজেসন, কনটেন্ট এবং মার্কেটিং চার্জ।
এখন প্রশ্ন হচ্ছে, সব কিছু ফেসবুকে থাকা সত্তেও, এর বিকল্প হিসেবে কোন টাকে বেছে নেয়া যায় ?
সত্যিকার অর্থে একটা প্রশ্ন করে উত্তর দেয়ার চেষ্টা করি।
- আপনার ব্যবসা আপনি কোথায় নিয়ে যেতে চান ৬ মাস পড়ে ?
- আপনি কি আজিবন ফেসবুকেই আপনার পণ্যের মার্কেটিং করতে চান ?
- আপনি কি ফেসবুককে জাস্ট মাস শেষে কিছু ইনকাম আসবে এই জন্য ব্যবহার করতে চান?
এখানে উত্তরের উপর ডিপেন্ড করবে আপনার জন্য ফেসবুকের বিকল্প আছে কিনা !!
যদি আপনার দীর্ঘমেয়াদি কোন প্ল্যান না থাকে, যদি আপনি আজিবন ফেসবুকেই মার্কেটিং করতে চান, ফেসবুককে শুধু মাস শেষে কিছু আয়ের পথ হিসেবে বেছে নিতে চান তবে আপনার কোন বিকল্প নেই। আপনারা ফেসবুকের মাধ্যমে ব্যবসা চালিয়ে নিয়ে যেতে পারেন, কোন সমস্যা হবে না আশা করি।
আর যাদের এটা মুল ব্যবসা, অনেক দূর এগিয়ে যেতে চান, শক্তিসালি সকল মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম কে ব্যবহার করতে চান, ফেসবুকের বিকল্প খুজছেন তাদের জন্য শুধু ওয়েবসাইট হতে পারে একমাত্র বিকল্প মাধ্যম।
কি কারন ?
বাংলাদেশে লিঙ্কডইন, টুইটার, পিন্টারেস্ট কিংবা টিকটিকের কথাই বলি এখানে সত্যিকার অর্থে তেমন অডিয়েন্স নেই যাদের মাধ্যমে লোকাল মার্কেটিং করা সম্ভব, যেটা ফেসবুকে করা যায়।
তাহলে ওয়েবসাইট কেন বা কিভাবে এর বিকল্প ?
আপনি হয়তো জানেন না, দুনিয়ার যত মার্কেটিং হয় সব ওয়েবসাইট কেন্দ্রিক, জি ঠিকি শুনেছেন প্রায় ৯৩% মার্কেটিং হয় ওয়েবসাইটকে কেন্দ্র করে, ফেসবুক কিন্তু অন্য কোন সোশ্যাল মিডিয়া তে মার্কেটিং করে আজকে ফেসবুক হয়নি, নিজেই ওয়েবসাইট দিয়েছে, তাই আপনি যেখানে মার্কেটিং করছেন তারাই কিন্তু সবার আগে ওয়েবসাইট করেই নিজের মার্কেটিং করেছে।
এই সামান্য যুক্তি দিয়েই বুঝতে পারবেন মার্কেটিং বলতে ফেসবুক হচ্ছে সব কিছুর মধ্যে ছোট্ট একটা প্ল্যাটফর্ম।
যে যেখানেই মার্কেটিং ক্যাম্পেইন তৈরি করুক না কেন, টার্গেট থাকে নিজেদের ওয়েবসাইটে নিয়ে আসার। আর নিজেদের ওয়েবসাইট থাকে নিজের মত করে গ্রাহককে বোঝানোর সব উপকরন।
মানে হল, আপনার ওয়েবসাইট আছে ধরে নিন, কি কি করতে পারবেন তা নিচে দেখুন, কোথায় কোথায় মার্কেটিং করতে পারবেন দেখুন।
- ফেসবুক থেকে ট্রাফিক কে ওয়েবসাইট নিয়ে যেতে পারবেন, এখানে ফেসবুক হল মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম, আর আপনার ওয়েবসাইট হল টার্গেট প্ল্যাটফর্ম বা ল্যান্ডিং পেজ। বা গ্রাহক ডেস্টিনেশন আপনার ওয়েবসাইট।
- গুগল এডসঃ অর্থাৎ গুগলে কেউ আপনার ক্যাটাগরি এর প্রোডাক্টের কোন কিছু লিখে সার্চ দিলেই আপনার ওয়েবসাইট টি সবার উপরে চলে আসবে। এখানে গুগল সার্চ বা গুগল এডস হল আপনার মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম। আর গ্রাহক যাবে আপনার ওয়েবসাইটে।
- গুগল ডিসপ্লে এডসঃ এটার মাধ্যমে আপনি চাইলে প্রথম আলো, জাগো নিউজ কিংবা বাংলাদেশের যে কোন অনলাইন নিউজ পেপারে আপনার প্রডাক্টের ইমেজ সহ প্লেস করতে পারবেন। এখানে প্রথম আলো হবে আপনার মার্কেটিং করার প্ল্যাটফর্ম আর ডেস্টিনেশন হবে আপনার ওয়েবসাইট।
- লিঙ্কডিন / টুইটার / টিকটিকঃ জি ঠিকি পড়ছেন, এমন কোন সাইট নেই যারা আপনার জন্য এড দিবে না, কিন্তু সেখানের এডে ক্লিক করলে চলে যাবে আপনার ওয়েবসাইটে।
- ইউটিউব থেকেও আপনি ভিজিটর আপনার ওয়েবসাইটে বা ই-কমার্স সাইটে নিয়ে আসতে পারবেন।
উপরে সামান্য কিছু উদাহরন দিয়েছি, পুরো পৃথিবীর মার্কেটিং চলছে এভাবেই, যে কোন প্লাটফর্মে এড দিক কিনা সে যাবে তাদের ওয়েবসাইটে। এটাই ই-কমার্সের নিয়ম, আদতে এফ-কমার্স বোঝানোর জন্য মানুষ ব্যবহার করে। সত্যিকার অর্থে ফেসবুক দিন শেষে কোন ই-কমার্স প্ল্যাটফর্ম নয়, একটা সোশ্যাল মিডিয়া মাত্র। মানুষ এখানে কিনতে আসেনা, আসে সোশ্যাল এক্টিভিটির জন্য, সেখানে আপনি সুজোগে ব্যবসা করছেন সেটা ঠিক আছে, তবে এটাকেই ই-কমার্স বানিয়ে ফেললে ভুল টা আপনার ই।
এক কথায় শুধু মাত্র আপনার একটি ওয়েবসাইট থাকলে আপনি ফেসবুক সহ দুনিয়ার বেশিরভাগ ওয়েবসাইট কে ব্যবহার করতে পারবেন আপনার মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে।
এছাড়া আপনার ওয়েবসাইট সত্যিকার অর্থে আপনার একটা পরিচিতি, ফেসবুক পেজ কোন পরিচিতি নয়, আপনার পেজ থেকে লাখ টাকা সেল হতে পারে তবে এটা স্থায়ী কোন প্লাটফর্ম নয়।
কারন ?
কারন যে কোন সময় ফেসবুক নিজেই আপনার পেজ বন্ধ করে দিতে পারে। সরকার এটাকে ক্ষতিকর হিসেবে ধরে পুরো ফেসবুককে বন্ধ করে রাখতে পারে। ফেসবুকের বিভিন্ন ধরনের সমস্যায় আপনার ব্যবসার ক্ষতি হতে পারে।
- কিন্তু আপনি নির্বিকার হয়ে থাকতে পারবেন কিছু করতে পারবেন না। কারন এটা আপনার প্ল্যাটফর্ম নয়, আপনি বলতে পারবেন না এটা মুলত আপনার নিজের পেজ। কারন ফেসবুকের সাইটের কোন সমস্যা হলে নিজের পেজ বলে এখানে ঢুকতে পারবেন না, কিছু করতেও পারবেন না, যেমন টা ফেসবুক ডাউন হওয়ার সময় হয়েছে।
কিন্তু আপনার ওয়েবসাইট যেমন ই হোক, আপনি তাকে নিজের মত পরিবর্তন করতে পারবেন, নিজের মত করে সাজাতে পারবেন, বন্ধ হলে সমস্যা সমাধান করা আপনার নিজের উপর, সাথে যে কোন প্লাটফর্ম কে ব্যবহার করতে পারবেন মার্কেটিং প্ল্যাটফর্ম হিসেবে।
আপনার অডিয়েন্স আপনার সাইটে এসে পণ্য কিনবে, আপনাকে চিনবে, সত্যিকার পরিচিতি পাবেন। পেমেন্ট নিতে পারবেন আপনার ওয়েবসাইটের মাধ্যমে, সেখানে গ্রাহক যাবে, অনেক প্রোডাক্ট থেকে পণ্য কিনবে নিজের ইচ্ছে মত। দাম থেকে শুরু করে রিভিউ সব দেয়া থাকবে।
এখন হয়তো আপনার পেজ থেকে পণ্য কিনছে, কিছু দিন পর আপনার ওয়েবসাইট না থাকলে আপনার পেজ থেকে পণ্য কিনবে না এটা লিখে দেয়া গেলাম।
এখন কেমন ওয়েবসাইট করবেন, ওয়েবসাইটে অনেক ঝামেলা, ওয়েবসাইট করতে গেলে কি কি বিষয় দেখে বা জেনে নেয়া উচিত, কেমন প্রাইস হতে পারে এই বিষয়ে আমি আমার দ্বিতীয় পর্বে সহজ ও সাবলীল ভাবে বলার চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ। আশা করি উপকৃত হবেন।